মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক প্রজেক্ট ‘মাইন্ড ব্লুমিং’-এর মাধ্যমে ২০১৯ সালে যাত্রা শুরু করে ‘ইউনাইটেড অ্যাকশন ফাউন্ডেশন’। একজন পেশাদার মনোরোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিই ছিল ‘মাইন্ড ব্লুমিং’-এর প্রধান উদ্দেশ্য। যেখান থেকে সুবিধা পেয়েছেন নানা বয়সের প্রায় ৩০০ জন ব্যক্তি।
তবে শুধু মাইন্ড ব্লুমিং নয়, একতাবদ্ধভাবে পরিবর্তন আনার প্রত্যয় নিয়ে সেচ্ছাসেবী এই সংগঠনটি কাজ করছে পরিবেশ এবং মানবিক কার্যক্রম নিয়েও। আর সেগুলো সবই পরিচালনা করছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের স্বেচ্ছাসেবী তরুণ শিক্ষার্থীরা, যা বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সকলের কাছে।
২০১৯ সালে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস’র ডেভেলপমেন্ট স্টাডিস ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান নাদিম, মেসবাহ উল ইসলাম সাকিফ ও মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম উদ্যোগ নিয়ে তৈরী করেন সংগঠনটি। তারপর কারো একার পক্ষে কোনো ধরনের অসঙ্গতির পরিবর্তন করা সম্ভব নয় জেনে কাজ শুরু করেন ‘টুগেদার টু চেইঞ্জ’ মূলমন্ত্রে। এরপর তা ছাড়িয়ে গেছে অন্যান্য ক্যাম্পাসের অনেক সংগঠনকেই।
সংগঠনের কার্যক্রম প্রসঙ্গে নাজমুল হাসান নাদিম বাংলানিউজকে বলেন, এটি মূলত একটি অলাভজনক ও অরাজনৈতিক সেচ্ছাসেবী সংগঠন। ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর সময় বিবেচনায় কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক প্রজেক্ট ‘মাইন্ড ব্লুমিং’ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। এছাড়া অনলাইনে পরামর্শ দেওয়ার জন্য ফেসবুকে ‘মাইন্ড ব্লুমিং’ নামক একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা হয়েছে। যেখানে যে কেউ চাইলে নিজের পরিচয় প্রকাশ না করেই তাদের সমস্যার কথা শেয়ার করতে পারেন। এই প্রজেক্টটিতে অ্যাডভাইজার হিসেবে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকিয়াট্রি ডিপার্টমেন্টের রেসিডেন্ট ডা. জুর্দি আদম।
সংগঠনের পরিবেশ বিষয়ক কার্যক্রম নিয়ে মেসবাহ উল ইসলাম সাকিফ বলেন, ‘ইউনাইটেড অ্যাকশন ফাউন্ডেশন’ তাদের ‘চেঞ্জ দ্যা ট্রেন্ড’ নামক পরিবেশ বিষয়ক প্রজেক্টর মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়া ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপহার হিসেবে গাছ দেওয়া ও রোপণের বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করছে। কেননা আমরা এটা জানি যে সবুজের কোনো বিকল্প নেই।
এছাড়া মানবিক কার্যক্রম ও জরুরি সেবা প্রদানেও পিছিয়ে নেই সংগঠনটি। যে কোনো ধরনের দুর্যোগ অথবা দুর্ঘটনাতেও তারা জরুরি সেবা ও সহায়তা প্রদান করে আসছে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম বলেন, সব ধরনের নেতিবাচক পরিস্থিতি ও উৎসবে নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের পাশে থাকার চেষ্টা করছে ‘ইউনাইটেড অ্যাকশন ফাউন্ডেশন’। করোনা পরিস্থিতিতে ঈদকে একটু আনন্দময় করার জন্য ‘গিফটস ফর ঈদ ২০২০’ নামে একটি পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়। এই উদ্যেগের মাধ্যমে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও পাবনার কয়েকটি এলাকায় অসহায়, কর্মহীন, দুস্থদের মাঝে ঈদের বিশেষ খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে এই সংগঠনটি।
এছাড়া দেশের লকডাউন পরিস্থিতি শিথিল করলেও নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের অর্থনৈতিক চাপকে মাথায় রেখে সংগঠনটি ’২০ টাকার বাজার’ নামে একটি প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে। সংগঠনের সদস্যদের ব্যক্তিগত অর্থায়নে চলমান এই উদ্যোগের মাধ্যমে অনলাইনে অর্ডার করে একটি নিম্ন-মধ্যবিত্ত অথবা নিম্নবিত্ত পরিবার ২০ টাকায় প্রায় ৬০০ টাকা সমমূল্যের বাজার সংগ্রহ করতে পারবে।
মানসিক, পরিবেশ এবং মানবিক বিষয়গুলো নিয়ে সংগঠনের এই কার্যত্রমকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। ‘মাইন্ড ব্লুমিং’ প্রজেক্ট নিয়ে ইতিবাচক মতামত দিয়েছেন সেবা নেওয়া প্রায় শতভাগ মানুষ। আর পরিবেশের পাশাপাশি মানবিক দিক নিয়েও কাজ করায় বিষয়গুলোকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষেরা।